মানসিক রোগ থেকে মুক্তির উপায়

মানসিক রোগ থেকে মুক্তির উপায় নিয়ে আজকের এই আর্টিকেলে আলোচনা করবো। মানুষ হচ্ছে সামাজিক জীব।জীবনে চলার পথে আমাদেরকে অনেক সময় বিভিন্ন বাধা বিপত্তির সম্মুখীন হতে হয়। এর ফলে আমরা যেমন শারিরীকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ি ঠিক তেমনি আমরা মানসিকভাবেও অসুস্থ হয়ে যায়। এর ফলে দেখা দেয় মানসিক বিভিন্ন রোগ। আমাদের আজকের এই আর্টিকেলে মানসিক রোগ থেকে মুক্তির উপায় নিয়ে আলোচনা করবো। কাজেই আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন। 

মানসিক-রোগ-থেকে-মুক্তির-উপায়

পোস্ট সূচিপত্র :মানসিক রোগ থেকে মুক্তির উপায় 

মানসিক রোগ থেকে মুক্তির উপায় 

মানসিক রোগ থেকে মুক্তির উপায় নিয়ে আর্টিকেলের শুরুতেই আলোচনা করবো। মানসিক রোগ আমাদের জীবনে চলার পথে অনেক বাধা তৈরি করে। এর ফলে নষ্ট হয় আমাদের দৈনন্দিন জীবনের আনন্দের মুহুর্তগুলো। চলুন মানসিক রোগ থেকে মুক্তির কতগুলো উপায় সম্পর্কে জেনে নেই। 
  • সকল ধরনের নেশাজাতীয় দ্রব্য থেকে দূরে থাকা। 
  • নিজেকে সবসময় যেকোন কাজে ব্যাস্ত রাখা। 
  • বন্ধু বান্ধব, আত্মীয় স্বজনের সাথে মেলামেশা করা। 
  • প্রতিদিন শরীরচর্চা করা 
  • ধর্মীয় সকল কাজকর্ম যেমন -নামাজ পড়া,রোযা রাখা, আল্লাহর সকল বিধান মেনে চলা। 
  • প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমানো। 
  • নিয়ম মাফিক জীবনযাপন করা। 
  •  নিয়মিত সুষম ও পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ করা। 
  • প্রয়োজনে কোন মানসিক ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া। 
সুতরাং বলা যায় যে, উপরোক্ত পদ্ধতি গুলো মেনে চললে আপনি মানসিক রোগ থেকে মুক্তি পেতে পারেন। 

মানসিক রোগ কী

মানসিক স্বাস্থ্যের একটি রোগ হচ্ছে মানসিক ব্যাধি। মানসিক রোগ হচ্ছে একজন ব্যাক্তির অস্বাভাবিক জীবন যাপন, অস্বাভাবিক আচরণ এবং মস্তিষ্কের সাথে সম্পর্কিত এক রোগ। এই রোগে রোগী প্রচন্ড মানসিক সমস্যাগে ভুগে থাকে। 

মানসিক রোগের কারণ 

মানসিক রোগের প্রকৃত কারণ এখনো জানা সম্ভব হয় নি। নিচে মানসিক রোগের কতগুলো কারণ দেওয়া হলো:
  • দীর্ঘমেয়াদী ঘুমের অভাব। 
  • দীর্ঘমেয়াদী ভারসাম্যহীনতার অভাব
  • ইন্টারনেট আসক্তি 
  • নেশাজাতীয় দ্রব্যের ব্যবহার
  • মানসিক, শারিরীক নির্যাতন।
  • পরিবেশগত প্রভাব
  • জেনেটিক বা বংশগত 
  • মস্তিষ্কের গঠনগত সমস্যা 
  • ডায়াবেটিস 
  • স্ট্রোক
  • মৃগীরোগ 
  • কিডনি ফেইলিউর
  • ব্রেইন টিউমার
সুতরাং উপরোক্ত সমস্যাগুলো যদি একজন ব্যাক্তির মধ্যে থাকে তাহলে তিনি মানসিক রোগে ভোগতে পারেন। 

বিভিন্ন মানসিক রোগ 

মানসিক রোগকে আমরা মূলত দুই ভাবে বিভক্ত করতে পারি। যেমন-
  • সাইকোটিক
  • নিউরোটিক
নিউরোটিক মানসিক রোগ 
  • টেনশন
  • প্যানিক অ্যাটাক
  • স্ট্রেস ডিসওর্ডার 
  • হিস্টিরিয়া 
  • সূচিবাই
  • ঘুমের সমস্যা 
  • যৌন সমস্যা 
  • ইন্টারনেট আসক্তি 
  • অস্বাভাবিক রাগ
সাইকোটিক মানসিক রোগ
  • সিজোফ্রেনিয়া 
  • বাইপলার মুড ডিজর্ডার

মানসিক রোগী চেনার উপায় 

একজন রোগীর মধ্যে যদি মানসিক রোগের সকল লক্ষণ প্রকাশ পায় তাহলেই সে মানসিক রোগী আক্রান্ত এমনটা ভাবা যাবে না। কেননা মানুষের মন পরিবর্তনশীল। ক্ষণে ক্ষণে তা পরিবর্তন হয়। কখনো সে আনন্দিত হয় আবার কখনো দু:খ পায়। একজনকে আমরা তখনই মানষিক রোগী বলতে পারবো যখন তার মধ্যে মানষিক রোগের লক্ষণ গুলো দীর্ঘস্থায়ী হয়। মানসিক রোগী তার দৈনন্দিন জীবনের সকল কাজকর্ম অস্বাভাবিকভাবে করবে। মানসিক লক্ষণের পাশাপাশি তার শারিরীক বিভিন্ন উপসর্গ দেখা দিবে। সুতরাং মানসিক রোগের কোন লক্ষণ কোন ব্যাক্তির মধ্যে দেখা দিলেই তার যে মানসিক রোগ হয়ছে এমনটা না ভেবে ব্যাক্তিকে একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হওয়ার পরামর্শ দিতে হবে এবং তারপর যদি চিকিৎসক তাকে রোগী হিসেবে মনে করে তাহলেই কেবল আমরা তাকে মানসিক রোগী বলতে পারি। 

মানসিক রোগীদের খাবারদাবার :

আমাদের শারিরীক স্বাস্থ্যকে ভালো রাখার জন্য পুষ্টিকর খাবারের ভূমিকা অপরিসীম। আবার এরকম অনেক খাবার আছে যা মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখায় সাহায্য করে।আমরা যদি একজন মানসিক রোগীর মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে নজর দিতে চায় তাহলে প্রথমে তাকে সুষম খাবার প্রদান করতে হবে। কারণ সুষম খাবারে রয়েছে সব রকমের পুষ্টিগুন। 

মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায় এমন কতকগুলো খাবার হলো -
  • ওমেগা -৩ জাতীয় ফ্যাটি এসিড 
  • ডার্ক চকলেট 
  • শস্য জাতীয় খাবার 
  • প্রোটিন (পর্যাপ্ত পরিমাণে)
  • সকল ধরণের বাদাম এবং বাদাম জাতীয় খাবার 
  • ভিটামিন -ডি 
  • ম্যাগনেশিয়াম জাতীয় খাবার 
  • ভিটামিন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যুক্ত খাবার - ভিটামিন এ, সি, ই 
সুতরাং বলা যায় যে, উপরোক্ত খাবারগুলো যদি একজন মানসিক রোগীকে খাওয়ানো হয় তাহলে তা ব্রেনের এক্টিভিটি বাড়ানোর পাশাপাশি শরীর ও মনকে সুস্থ এবং সুন্দর রাখবে। 

মানসিক রোগীর চিকিৎসা 

একজন মানসিক রোগীর জন্য তার মানসিক রোগের চিকিৎসা করা অত্যন্ত জরুরী। মানসিক চিকিৎসার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে থেরাপি, ওষুধ এবং কাউন্সেলিং। কারণ একজন মানুষের মানসিক স্বাস্থ্য খুবই প্রয়োজনীয়। মন আর শরীর একে অপরের পরিপূরক। মন ভালো না থাকলে যেমন শরীর ভালো থাকে না ঠিক তেমনি শরীর ভালো না থাকলে মনও ভালো থাকে না। 

মানসিক রোগের চিকিৎসা কেমন হবে তা নির্ভর করে থাকে রোগের ধরনের উপর৷ মানসিক রোগ দুই ধরনের হয়ে থাকে।

সাইকোসিস :
সাইকোসিস হচ্ছে মানসিক রোগের এক জটিল প্রকৃতি। এতে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে হাইপারটেনশন, বাইপোলার ডিসঅর্ডার, সিজোফ্রেনিয়া ইত্যাদি। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, এই ধরনের রোগে আজীবন ভুগতে হয় এবং দীর্ঘমেয়াদী ওষুধ খেতে হয়। এসব রোগে ভোগা ব্যাক্তির সবসময় ডাক্তারের পরামর্শে থাকতে হয়। 

নিউরোসিস
নিউরোসিস হচ্ছে মূদু মানসিক সমস্যা। এতে রয়েছে অল্পতেই রেগে যাওয়া, বিষন্নতা ইত্যাদি। নিউরোসিস রোগে আক্রান্তরা আশেপাশের মানুষের সহযোগিতা এবং কাউন্সিলের মাধ্যমে সেরে উঠে। অনেক সময় থেরাপি দেওয়াও প্রয়োজন পড়ে। 

মানসিক রোগের ডাক্তারের তালিকা 

মানসিক রোগের চিকিৎসা বর্তমানে অনেক উন্নতি লাভ করেছে। মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য রয়েছে অনেক কোয়ালিটি সম্পন্ন ডাক্তারও। চলুন তাহলে কতগুলো ডাক্তারের নাম সম্পর্কে জেনে নেই -
  • ডা: মেখলা সরকার - জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউট 
  • ডা: হেলাল উদ্দিন আহমেদ - জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউট, সহযোগী অধ্যাপক 
  • অধ্যাপক ডা : ওয়াজিউল আলম চৌধুরী - জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউট, সাবেক পরিচালক 
  • অধ্যাপক :ডা:মো: গোলাম রাব্বানী - জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউট, সাবেক পরিচালক 
উপরে যেসব মানসিক রোগের ডাক্তারের নাম উল্লেখ করা হয়েছে তারা সবাই নিয়মিতভাবে রোগী দেখে থাকেন। তাছাড়া আরো অনেক বিশেষজ্ঞ ডাক্তার রয়েছেন যারা নিয়মিতভাবে রোগী দেখে থাকেন। আপনার পরিবার অথবা পরিচিত কেউ যদি মানসিক রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে তাহলে এসব ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে পারেন। 

সরকারি ও বেসরকারি উভয় ভাবেই মানসিক রোগের চিকিৎসা দেওয়া হয়। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় মানসিক রোগের চিকিৎসা কেন্দ্র হচ্ছে পাবনার ৫০০ শয্যাশায়ী মানসিক হাসপাতাল। তাছাড়া ঢাকার অনেক হাসপাতালে আলাদাভাবে মানসিক রোগের চিকিৎসা কেন্দ্র রয়েছে। 

লেখকের মন্তব্য 

একজন মানুষের মানসিক রোগ হলেই তাকে ছোট করে দেখা যাবে না। বেশিরভাগ মানসিক রোগের সমস্যাই হ্রাস করা যায়। এজন্য দরকার সঠিক চিকিৎসা, সঠিক পরিবেশ এবং সঠিক কাউন্সিল। আমাদের আজকের এই আর্টিকেলে মানসিক রোগ থেকে মুক্তির উপায় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আশা করি আর্টিকেলটি আপনার উপকারে আসবে। আর্টিকেল সম্পর্কে আপনার মতামত, পরামর্শ কিংবা প্রশ্ন আমাদের কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না। এরকম তথ্যবহুল আর্টিকেল পেতে প্রতিদিন আমাদের ওয়েবসাইটি ভিজিট করতে পারেন। ধন্যবাদ। 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

My Teach Info এরনীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url