ক্যান্সার রোগীর মৃত্যুর লক্ষণ জানুন

ক্যান্সার নাম শুনলেই মানুষের মনে প্রথম যে ধারণাটি আসে সেটি হচ্ছে নিশ্চিত মৃত্যু। ক্যান্সার রোগীর মৃত্যুর লক্ষণ গুলো জানা অনেক জরুরি। শরীরে বেশ কিছু লক্ষণ দেখা দিলে অবহেলা না করে অবশ্যই ডাক্তারের নিকট যাওয়া উচিত। আমাদের আজকের এই আর্টিকেলে ক্যান্সার রোগীর মৃত্যুর লক্ষণ নিয়ে আলোচনা করবো। কাজেই আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত পড়ুন।

ক্যান্সার-রোগীর-মৃত্যুর-লক্ষণ

তাছাড়া আরো আলোচনা করবো - ক্যান্সার হলে মৃত্যুর কারণ,ক্যান্সার হওয়ার কারণ, ক্যান্সার প্রতিরোধ করার উপায়। 

পোস্ট সূচিপত্র - ক্যান্সার রোগীর মৃত্যুর লক্ষণ সংশ্লিষ্ট সূচিপত্র  

ক্যান্সার রোগীর মৃত্যুর লক্ষণ 

ক্যান্সার রোগীর মৃত্যুর লক্ষণ সম্পর্কে আর্টিকেলের শুরুতেই জানতে পারবেন।ক্যান্সার রোগীর মৃত্যুর লক্ষণ তীব্রতা, ক্যান্সারের ধরন এবং শরীরে ছড়িয়ে পড়ার উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হতে পারে। 
ত্বক পরিবর্তন :
সাধারণত ত্বক পরিবর্তন কেবল ত্বকের ক্যান্সারেই দেখা যায় না বরং অন্যান্য আরো অনেক ক্যান্সারে ত্বকের পরিবর্তন দেখা যায়। 
  • জন্ডিস যাতে ত্বক ও চোখ হলুদ হয়ে যায়। 
  • চুলকানি বা ত্বক লাল হয়ে যাওয়া 
  • চুলের অতিরিক্ত বৃদ্ধি পাওয়া
  • হাইপারপিগমেন্টেশন বা ত্বক কালো হয়ে যাওয়া 
জ্বর :
জ্বর হচ্ছে ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীদের একটি সাধারণ লক্ষণ। যদি আপনার শরীরে ক্যান্সার উৎপন্ন হয়ে তা অন্যান্য জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে তাহলেই আপনার শরীরে জ্বর দেখা দিবে। ক্যান্সার আক্রান্ত হলে অবশ্যই জ্বর দেখা দিবে।লিউকেমিয়া বা লিম্ফোমা রোগের জ্বর হচ্ছে প্রধান লক্ষণ। 
ওজন হ্রাস পাওয়া :
কোনো কারণ ছাড়াই ওজন হারানো ক্যান্সার রোগের প্রধান একটি লক্ষণ। ব্যাখাহীন ওজন হারানো ফুসফুস ক্যান্সার,খাদ্যনালী,পাকস্থলী বা অগ্ন্যাশয় ক্যান্সারের প্রধান লক্ষণ। 
ক্ষত:
আমরা অনেকেই এই কথাটি জানি না যে শরীরে যদি কোনো আঁচিল থাকে তাহলে সেই আঁচিলে যদি ব্যাথা হয় বা কোনো রক্তপাত দেখা দেয় তাহলে তা ক্যান্সারের একটি লক্ষণ হতে পারে। এটি ছাড়াও অন্যান্য ক্ষতও যদি শরীরে থাকে এবং সেগুলো যদি দীর্ঘদীন ধরে ভালো না হয় তাহলেও তা ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে। আবার মুখে যদি কোনো ধরনের ক্ষত দীর্ঘদিন ধরে থাকে তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। আবার জরায়ুতে কোনো ধরনের ক্ষত বা রক্তপাত পরবর্তীতে বড় রকমের ক্যান্সারের জন্ম দিতে পারে। 
রক্তপাত :
ক্যান্সারের জন্য আপনার শরীরের যেকোনো জায়গা থেকে অস্বাভাবিক রক্তপাত হতে পারে। আপনার যদি কাশির সাথে রক্তপাত হয় তাহলে তা ফুসফুস ক্যান্সারের কারণ হতে পারে। আবার মলের সাথে রক্তপাত হলে তা হতে পারে মলাশয় ক্যান্সার। আবার সার্ভিক্যাল ক্যান্সার হলে জরায়ু থেকে অস্বাভাবিক রক্তপাত হতে পারে। আবার মূএের সাথে রক্তপাত হলে তা হতে পারে কিডনির সমস্যা। আবার যদি ব্রেস্ট ক্যান্সার থাকে তাহলে স্তন থেকে রক্তমিশ্রিত তরল বা ডিসচার্জ বের হতে পারে। 
খাবার গিলতে না পারা:
আপনার যদি গলার ক্যান্সার, পাকস্থলী বা ইসোফ্যাগাসের সমস্যা থাকে তাহলে খাবার গিলতে পারবেন না। 
গলার স্বর পরিবর্তন :
আপনার যদি হঠাৎ করে গলার স্বরে পরিবর্তন দেখা যায় তাহলে তা ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে। আবার তিন সপ্তাহ বা এর বেশি সময় ধরে কাশি হলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দেখানো উচিত। 
ক্লান্তি বা অবসাদ :
আপনার যদি চরম ক্লান্তি বা অবসাদ লাগে এবং পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়ার পরও মনে হয় যে ক্লান্তি শেষ হচ্ছে না তাহলে তা ক্যান্সারের একটি উপসর্গ হতে পারে। লিউকেমিয়া হলে সবচেয়ে বেশি ক্লান্তি দেখা দেয়। 

কোনো মানুষের শরীরে যদি ক্যান্সার দেখা দেয় তাহলে তা ধীরে ধীরে দেখা দিবে এবং সময়ের সাথে অবস্থা আরো খারাপ হতে পারে। ক্যান্সার রোগীর শরীরে বেশ কিছু পরিবর্তন দেখলে বুঝতে পারবেন যে আসলে রোগীটি মারা যাবে। যেমন-
  • রোগীর জ্ঞান হারিয়ে ফেলা
  • রোগী প্রচন্ড পরিমাণে কনফিউশানে ভোগা 
  • প্রচুর পরিমাণে শ্বাসকষ্ট হওয়া
  • রোগীর চেতনার পরিবর্তন হওয়া
  • প্রচুর পরিমাণে অস্থির হওয়া
আপনার আশেপাশে বা পরিবারে যদি কারো উপরোক্ত লক্ষণগুলে থাকে তাহলে অবহেলা না করে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন। সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা ক্যান্সার রোগীকে মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচিয়ে তুলতে পারে।

ক্যান্সার হলে মৃত্যুর কারণ

ক্যান্সার হচ্ছে এমন একটি রোগ যা হলে শরীরে অস্বাভাবিক কোষ বৃদ্ধি হয় এবং অনিয়ন্ত্রিতভাবে কোষ বিভাজন দেখা দেয়। সাধারণ অবস্থায় মানে মানুষের যখন শরীর নরমাল কন্ডিশন থাকে,কোনো রোগ থাকে না তখন কোষ নিয়ন্ত্রিতভাবে বিভাজিত হয় এবং পুরনো কোষগুলো নতুন কোষ দ্বারা প্রতিস্থাপন হয়।
ক্যান্সার-রোগীর-মৃত্যুর-লক্ষণ

ক্যান্সার শরীরের যেকোনো অংশে দেখা দিতে পারে এবং পরবর্তীতে তা পুরো শরীরে ছড়িয়ে পড়তে পারে। মানব শরীরে বিভিন্ন প্রকারের ক্যান্সার দেখা যায় যেমন- প্রোস্টেট ক্যান্সার, ফুসফুস ক্যান্সার,জরায়ু ক্যান্সার,ব্রেস্ট ক্যান্সার, কিডনির ক্যান্সার,ত্বকের ক্যান্সার ইত্যাদি। ক্যান্সার হওয়ার পিছনে অনেক কারণ থাকতে পারে।একেক ক্যান্সার হওয়ার পিছনের কারণ একেক রকম। 

ক্যান্সার হলে দেখা যায় যে, ৯৮% মানুষই মৃত্যুবরণ করে। খুব কম মানুষই আছে যারা ক্যান্সার থেকে রিকভারি করতে পারে। ক্যান্সারে শরীরে সুস্থ কোষের তুলনায় অসুস্থ কোষের সংখ্যা বৃদ্ধি পায় এতে করে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের কার্যকারীতা নষ্ট হয়ে যায়। কারণ অসুস্থ কোষগুলো শরীরের সকল পুষ্টি গ্রহণ করে নেয়, এতে সুস্থ কোষগুলো বেঁচে থাকার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে পুষ্টি পায় না এবং সকল কাজকর্ম সম্পন্ন করতে পারে না। ফলে সুস্থ কোষ দূর্বল হয়ে পড়ে। 

আবার ক্যান্সারের চিকিৎসা নিলেও দেখা যায় যে, চিকিৎসার অনেকগুলো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে যা শরীরকে আরো বেশি দূর্বল করে তোলে। বর্তমানে ক্যান্সার নির্ণয় এবং চিকিৎসা পদ্ধতির অনেক উন্নতি সাধন হয়েছে যা ক্যান্সার থেকে মুক্তি পেতে সহায়তা করবে।প্রাথমিক অবস্থায় যদি ক্যান্সার ধরা পরে তাহলে সহজে চিকিৎসার মাধ্যমে তা থেকে মুক্তি সম্ভব। ক্যান্সারের অনেকগুলো চিকিৎসা পদ্ধতি রয়েছে যেমন- কেমোথেরাপি, টার্গেটেড থেরাপি, ইমিউনোথেরাপি, সার্জারি ইত্যাদি। 

আমাদের দেশে ক্যান্সারে মৃত্যুর প্রধান কারণ হচ্ছে অসচেতনতা। কারণ অধিকাংশ মানুষই ক্যান্সার সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানে না। শরীরে কোনো লক্ষণ দেখা দিলে গুরুত্ব দেয় না, ডাক্তারের কাছে যেতে চায় না। এর ফলে অবস্থা যখন খারাপ হয়ে যায় তখন দেখা যায় ডাক্তারের কাছে যায়, কোনো চিকিৎসা তখন আর শরীরে কাজ করতেছে না।ফলে ধীরে ধীরে রোগী মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।

ক্যান্সার হওয়ার কারণ

ক্যান্সার হওয়ার সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ নেই। তবে কিছু কারণ রয়েছে সেগুলো হলে ক্যান্সার হতে পারে। যেমন-
  • ক্যান্সার হওয়ার প্রধান একটি কারণ হচ্ছে জেনেটিক বা বংশগতি। যদি কারো বংশে ক্যান্সার থাকে তাহলে পরবর্তীতে তা বংশের অন্যান্য সদস্যদেরও হতে পারে।
  • ধূমপানের কারণে ক্যান্সার হতে পারে। 
  • তেজস্ক্রিয় রশ্মি থেকে ক্যান্সার হতে পারে। এক্সরে অফিসে যখন কেউ কাজ করে তখন তা থেকে বের হওয়া তেজস্ক্রিয় রশ্মি ক্যান্সার তৈরি করতে পারে।
  • দীর্ঘমেয়াদী সংক্রমণ থেকে ক্যান্সার হতে পারে। 
  • অপরিকল্পিত জীবনযাপন 
  • শারীরিক ব্যায়াম না করা 
  • খাদ্যে ব্যবহূত অতিরিক্ত পরিমাণে ফরমালিন ক্যান্সার তৈরি করে। 
  • সুষম খাদ্যের অভাব
সুতরাং উপরোক্ত কারণগুলো ছাড়াও ক্যান্সার হতে পারে।কি কারণে ক্যান্সার হলো এর সঠিক ব্যাখা মেডিকেল সাইন্স এখনো বের করতে পারে নি।

ক্যান্সার প্রতিরোধ করার উপায় 

ক্যান্সার-রোগীর-মৃত্যুর-লক্ষণ

ক্যান্সারকে প্রাণঘাতী রোগ বলা হয় তবে তা যদি প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়ে তাহলে চিকিৎসার মাধ্যমে ভালো করা সম্ভব। ক্যান্সার নিরাময়ের কোনো প্রতিষেধক আজ পর্যন্ত আবিষ্কার হয়নি৷ এটা সত্য যে, প্রতিকার করার চেয়ে প্রতিরোধ করা অনেক ভালো। আপনার যাতে ক্যান্সার না হয় সেজন্য আগে থেকেই সুস্থ লাইফস্টাইল মেনে চলা উচিত । ক্যান্সার প্রতিরোধ করার কতগুলো উপায় হচ্ছে -
  • ক্যান্সারের কোনো লক্ষণ হতে দেখলে অবহেলা না করে অবশ্যই ডাক্তারের শরণা সম্পন্ন হওয়া উচিত। 
  • প্রতি বছর ৬ মাস পর পর দুইবার বিভিন্ন স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা উচিত। 
  • বর্তমানে বিভিন্ন ক্যান্সার ভ্যাকসিন বের হচ্ছে৷ আগে থেকেই এসব ভ্যাকসিন নেওয়া থাকলে ক্যান্সার প্রতিরোধ করা সম্ভব। 
  • অনিরাপদ যৌন মিলন এড়িয়ে চলুন। অনেক মানুষ আছে যারা অনেকগুলো সেক্স পার্টনার রাখে তারা ক্যান্সারের ঝুঁকিতে রয়েছে। এগুলো অবশ্যই পরিহার করতে হবে। 
  • প্রতিদিন ৩০ মিনিট করে শারীরিক ব্যায়াম করুন।প্রতিদিন ব্যায়াম করলে নতুন কোষ তৈরি হয় , রক্ত ​​সঞ্চালন বৃদ্ধি পায়। ব্যায়াম ক্যান্সার প্রতিরোধে অনেক কার্যকরী ভূমিকা রাখে। 
  • অ্যালকোহল বা ধূমপান জাতীয় খাবার পরিহার করা উচিত। অ্যালকোহল আপনাকে ৬ প্রকারের ক্যান্সার থেকে মুক্তি দিতে পারে। 
  • স্বাস্থ্য সম্মত খাবার গ্রহণ করতে হবে। প্রতিদিন খাবারে রঙ্গিন ও সবুজ শাকসবজি গ্রহণ করা। কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার কম গ্রহণ করা, চিনি পরিহার করা। উচ্চ ফ্যাটযুক্ত খাবার কম খাওয়া।
  • অতিরিক্ত রাত না জাগা। খুব তাড়াতাড়ি ঘুমাতে যাওয়া এবং তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠা। 
সুতরাং বলা যায় যে, উপরোক্ত নিয়মগুলো মেনে চললে আপনি ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে পারবেন। 

আর্টিকেল সম্পর্কিত প্রশ্ন-উওর

প্রশ্ন ১: ক্যান্সার কি প্রতিরোধ করা যায়?

উত্তর: অবশ্যই ক্যান্সার প্রতিরোধ করা যায়। যদি ক্যান্সার প্রাথমিক অবস্থায় নির্ণয় করা যায় তবে অবশ্যই তা প্রতিরোধ করা যায়। 

প্রশ্ন ২:ক্যান্সার রোগের লক্ষণ কি কি?

উত্তর: ক্যান্সার রোগের লক্ষণ হচ্ছে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ, গলার স্বর পরিবর্তন, ওজন অস্বাভাবিকভাবে কমে যাওয়া,ক্লান্তি, মেজাজ পরিবর্তন ইত্যাদি। 

প্রশ্ন ৩: ক্যান্সার কি ছোঁয়াচে রোগ?

উত্তর: ক্যান্সার ছোঁয়াচে রোগ নয়। 

লেখকের মন্তব্য 

আমাদের আজকের এই আর্টিকেলে ক্যান্সার রোগীর মৃত্যুর লক্ষণ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আশা করছি আর্টিকেলটি পড়ে আপনি ক্যান্সার সম্পর্কে সচেতন হবেন। যেহেতু ক্যান্সার হলে মৃত্যু নিশ্চিত কাজেই যাতে ক্যান্সার না হয় সেদিকে মনোযোগী হতে হবে। আপনার পরিবারে,সমাজে বা প্রতিবেশী কেউ যদি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয় তাহলে তাকে অবহেলা না করে মানসিক সাপোর্ট দিবেন এবং ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন। আর্টিকেল সম্পর্কে আপনার অনূভুতি আমাদের জানাতে পারেন। এরকম আরো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সমৃদ্ধ আর্টিকেল পড়তে নিয়মিত ভিজিট করুন আমাদের ওয়েবসাইট My Teach Info। ধন্যবাদ। 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

My Teach Info এরনীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url