কলেরা রোগের প্রতিকার ও প্রতিরোধ
কলেরা হচ্ছে দূষিত পানিবাহীত একটি রোগ যা পানিতে থাকা ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে হয়ে থাকে। কলেরা একটি মহামারী রোগ এবং অনেক সময় এ রোগে মানুষের প্রাণও চলে যায়। এজন্য কলেরা রোগের প্রতিকার ও প্রতিরোধ জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের আজকের এই আর্টিকেলে কলেরা রোগের প্রতিকার ও প্রতিরোধ নিয়ে আলোচনা করবো। কাজেই আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত পড়ুন।
তাছাড়া আরো আলোচনা করবো- কলেরা রোগের লক্ষণ, কলেরা রোগ নির্ণয়, কলেরা রোগের চিকিৎসা, কলেরা রোগের জটিলতা, কলেরা স্যালাইন দেওয়ার নিয়ম, কলেরা কিভাবে ছড়ায় ইত্যাদি।
আর্টিকেল সূচিপত্র - কলেরা রোগের প্রতিকার ও প্রতিরোধ সংশ্লিষ্ট সূচিপত্র
- কলেরা রোগের প্রতিকার ও প্রতিরোধ
- কলেরা রোগের লক্ষণ
- কলেরা রোগ নির্ণয়
- কলেরা রোগের চিকিৎসা
- কলেরা রোগের জটিলতা
- কলেরা স্যালাইন দেওয়ার নিয়ম
- কলেরা কিভাবে ছড়ায়
- আর্টিকেল সম্পর্কিত প্রশ্ন-উত্তর
- লেখকের মন্তব্য
আরও পড়ুনঃ ডায়রিয়া হলে করণীয় কি
কলেরা রোগের প্রতিকার ও প্রতিরোধ
আর্টিকেলের শুরুতে কলেরা রোগের প্রতিকার ও প্রতিরোধ নিয়ে আলোচনা করবো -
কলেরা কি:
কলেরা হচ্ছে ব্যাকটেরিয়া জনিত একটি রোগ যা সাধারণত পানির মাধ্যমে ছড়ায়। ভিব্রিও কলেরা নামক এক জীবানুর জন্য এই রোগটি হয়ে থাকে। জার্মানের একজন বিজ্ঞানী রবার্ট কচ সর্বপ্রথম ১৮৮৩ সালে কলেরা রোগের জীবাণু আবিষ্কার করেন। কলেরা হলে প্রচুর পরিমাণ জল শরীর থেকে বেরিয়ে যায়। এতে শরীরে তরল পদার্থ এবং ইলেকট্রোলাইট হ্রাস পায়। কলেরা রোগের প্রতিরোধ ও প্রতিকারের জন্য -
- মাংস,শাকসবজি,ফল কাঁচা খাওয়া যাবে না
- খাবার ভালো করে রান্না করে গরম খাবার খাওয়া
- পানি ফুটিয়ে বা জীবানুমুক্ত পানি পান করা
- বরফ মিশিয়ে পানি পান করা থেকে বিরত থাকা
- দুধ ফুটিয়ে খাওয়া
- পরিষ্কার পানি পান করা
- বাসি খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকা
- বাড়িঘর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা
- খাবারের আগে, মলত্যাগের পরে এবং রান্না করার আগে অবশ্যই সাবান দিয়ে হাত পরিষ্কার করা।
- কলেরার টিকা গ্রহণ করা
- মানুষের চলাচল করার ক্ষেত্রে অবশ্যই সীমাবদ্ধতা রাখা।
- স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট ব্যবহার করা
সুতরাং উপরোক্ত উপায়ে কলেরা রোগের প্রতিকার ও প্রতিরোধ করা যায়।
আরও পড়ুনঃ জমির খতিয়ান বের করার নিয়ম
কলেরা রোগের লক্ষণ
কলেরা রোগীদের মাঝে সাধারণত মাঝারি থেকে গুরুতর লক্ষণ দেখা যায়। যেসব ব্যাক্তিকে কলেরা আক্রান্ত করে তাদের মাএ ১০% ব্যাক্তি বারো ঘন্টা থেকে পাঁচ দিনের মধ্যে আক্রান্ত হয়। কলেরা হলে যেসব লক্ষণ দেখা দেয় সেগুলো হচ্ছে -
- ব্লাড প্রেসার কমে যাওয়া
- মৃদু থেকে গুরুতর ডিহাইড্রেশন
- হঠাৎ করে ডায়রিয়া
- বমি
- মুখ শুকিয়ে যাওয়া
- প্রস্রাবের পরিমাণ করে যাওয়া
- মেজাজ খারাপ হওয়া
- অবসাদ
- গ্লানি
শিশুদের কলেরা হলে যেসব লক্ষণ দেখা যায় সেগুলো হচ্ছে-
- মোহা
- খিঁচুনি
- প্রচন্ড ঝিমুনি
- জ্বর
কলেরা হলে উপরোক্ত লক্ষণ গুলো একজন কলেরা রোগীর মধ্যে দেখা যায়।
আরও পড়ুনঃ হাঙ্গেরি ওয়ার্ক পারমিট ভিসা
কলেরা রোগ নির্ণয়
কলেরা রোগের পরীক্ষা সাধারণত রোগীর মল পরীক্ষা করে নির্ণয় করা হয়। মলে কলেরা ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি দেখে ডাক্তার কলেরা চিন্হিত করেন। ডায়রিয়া এবং কলেরার মধ্যে অবশ্যই একটি প্রার্থক্য রয়েছে। কলেরা হলে চাল ধোয়ার পানি বের হয় যা ডায়রিয়াতে হয় না। সাথে বমিও হয়। কলেরা রোগী দিনে ১০ বার থেকে ৪০ বারের বেশি পায়খানা করে থাকে।
আরও পড়ুনঃ জমি না কিনে কিভাবে বাড়ি বানাবো
কলেরা রোগের চিকিৎসা
কলেরা হচ্ছে এমন একটি রোগ যেখানে অনেক তাড়াতাড়ি পানিশূন্যতা দেখা দেয়। এজন্য কলেরা রোগীর অতি দ্রুত চিকিৎসা করানো উচিত।
কলেরা রোগের চিকিৎসাতে দুটি বিষয়কে প্রাধান্য দেওয়া হয় যেমন -
- সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা এবং পানিশূন্যতা দূর করা।কলেরার প্রধান চিকিৎসা হচ্ছে ওআরএস স্যালাইন খাওয়া। যেহেতু কলেরা রোগে শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে পানি ও লবন বেরিয়ে যায় এজন্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রোগীকে স্যালাইন খাওয়াতে হবে। স্যালাইন বাড়িতে বানাতে পারবেন আবার দোকান থেকেও কিনতে পারবেন।
- ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী এন্টিবায়োটিক গ্রহণ করা।
- কলেরা স্যালাইন শিরার মাধ্যমে দেওয়া
- জিংক গ্রহন করা যা বার বার পায়খানা হওয়া থেকে রক্ষা করবে।
কলেরার টিকা :
কলেরা যেহেতু একটি মহামারী রোগ। কাজেই কলেরা হলে টিকা গ্রহণ করা একটি কার্যকর উপায়। কলেরার টিকা কলেরাকে প্রতিরোধ করতে অনেক কার্যক্ষম। এই টিকা মৃত্যুর হার কমায়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষা প্রদান করে। যাদের বয়স এক বছরের বেশি তারা সবাই কলেরা টিকা নিতে পারবে। তবে গর্ভবতী মহিলাদের টিকা নেওয়ার ক্ষেএে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। কলেরার টিকা দুইভাবে গ্রহণ করা যায়
- মুখে খাওয়া
- ইনজেকশনের মাধ্যমে নেওয়া
কলেরার টিকা এক বছর পর্যন্ত কার্যকর থাকে। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে দুই বছর পর্যন্তও কার্যকর হয়ে থাকে। কলেরার টিকা হাসপাতালে বা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে পাওয়া যায়।
আরও পড়ুনঃ ইউরোপের কোন দেশে সহজে ভিসা পাওয়া যায়
কলেরা রোগের জটিলতা
কলেরা হলে যেসব জটিলতা দেখা দিতে পারে সেগুলো হচ্ছে -
- কলেরা রোগের প্রধান জটিলতা হচ্ছে পানিশূন্যতা।
- কলেরা হলে যদি পানিশূন্যতার পরিমাণ বেশি হয় তাহলে রোগী শকে চলে যেতে পারে।
- রক্তচাপ কমে যেতে পারে, হৃৎস্পন্দন বেড়ে যেতে পারে এবং রোগী অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে।
- কিডনি ফেইলিউর হতে পারে।
- হার্টের বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- পানিশূন্যতায় মস্তিষ্কের প্রচন্ড ক্ষতি হতে পারে যা মৃত্যু পর্যন্ত নিয়ে যেতে পারে।
- পেশিতে প্রচুর খিঁচুনি হতে পারে।
আরও পড়ুনঃ ইউরোপের নন সেনজেন ভুক্ত দেশের তালিকা
কলেরা স্যালাইন দেওয়ার নিয়ম
কলেরা স্যালাইন দেওয়ার কতগুলো নিয়ম রয়েছে। নিচে তা উল্লেখ্য করা হলো-
- কলেরা স্যালাইন দেওয়ার সময় রোগীর ওজন এবং পানিশূন্যতার মাএার উপর নির্ভর করে পরিমাণ নির্ধারণ করতে হবে।
- রোগীকে বার বার স্যালাইন খাওয়াতে হবে।
- রোগীর যদি বার বার বমিও হয় তারপরও স্যালাইন দেওয়া বন্ধ করা যাবে না।
- শিশুদের ক্ষেএে অবশ্যই চামচ দিয়ে খাওয়াতে হবে।
- ওআরএস স্যালাইন খাওয়ার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
আরও পড়ুনঃ যুক্তরাজ্য ওয়ার্ক পারমিট ভিসা
কলেরা কিভাবে ছড়ায়
কলেরা সাধারণত দূষিত পানি এবং খাবারের মাধ্যমে ছড়ায়। আক্রান্ত ব্যাক্তি যদি খোলা জায়গায় মলত্যাগ করে তাহলে তার মল থেকে ব্যাকটেরিয়া পরিবেশে ছড়িয়ে পড়ে এবং খাবার ও পানিকে দূষিত করে। অপরিষ্কার খাবার, দূষিত খাবার এবং সামুদ্রিক খাবার কলেরার প্রধান উৎস। আক্রান্ত ব্যাক্তির সাথে যদি সরাসরি যোগাযোগ বা সংস্পর্শে আসেন বা আক্রান্ত ব্যাক্তির ব্যবহার করা জিনিসপত্র ব্যবহার করেন তাহলেও কলেরা হতে পারে। দূষিত পানি যেমন -নদীর পানি, পুকুরের পানি,জলাশয়ের পানি পান করলে কলেরা দেখা দিতে পারে।
আরও পড়ুনঃ জমজমের পানি খাওয়ার নিয়ম জেনে নিন
আর্টিকেল সম্পর্কিত প্রশ্ন-উত্তর
প্রশ্ন ১: কলেরা কি?
উত্তর: কলেরা হচ্ছে একটি পানিবাহিত রোগ যা ভিব্রিও কলেরা নামক ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে হয়ে থাকে।
প্রশ্ন ২:কলেরা হলে কি ডাক্তার দেখানো উচিত?
উত্তর: অবশ্যই কলেরা হলে ডাক্তার দেখানো উচিত। তা না হলে পানিশূন্যতায় রোগীর জীবনও চলে যেতে পারে।
প্রশ্ন ৩: কলেরা রোগ নির্ণয়ের জন্য কি পরীক্ষা করা হয়?
উত্তর: কলেরা রোগ নির্ণয়ের জন্য মল পরীক্ষা করা হয়।
প্রশ্ন ৪:কলেরা রোগের জীবাণু কে আবিষ্কার করেন?
উত্তর: কলেরা রোগের জীবানু আবিষ্কার করেন জার্মান বিজ্ঞানী রবার্ট কচ।
প্রশ্ন ৫:কলেরা রোগের জীবানুর বৈজ্ঞানিক নাম কি?
উত্তর: কলেরা রোগের জীবানুর বৈজ্ঞানিক নাম হচ্ছে Vibrio cholerae।
প্রশ্ন ৬:কলেরা ও ডায়রিয়া কি এক?
উত্তর: কলেরা ও ডায়রিয়া এক নয়। ডায়রিয়ার একটি ফর্ম হচ্ছে কলেরা।
প্রশ্ন ৭:কলেরার লক্ষণ কি কি?
উত্তর: কলেরার লক্ষণ হচ্ছে পেট ব্যাথা,রক্তচাপ কমে যাওয়া, পেশিতে খিঁচুনি, প্রশ্রাবের পরিমাণ কমে যাওয়া ইত্যাদি।
আরও পড়ুনঃ বিদেশ যাওয়ার সরকারি এজেন্সি
লেখকের মন্তব্য
আমাদের আজকের এই আর্টিকেলে কলেরা রোগের প্রতিকার ও প্রতিরোধ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি।কলেরা যেহেতু একটি মহামারী রোগ কাজেই কলেরা থেকে বেঁচে থাকতে অবশ্যই সচেতন হন এবং পরিষ্কার পানি ও ফুটানো পানি পান করুন। আর্টিকেল সম্পর্কে আপনার মতামত, পরামর্শ কিংবা প্রশ্ন আমাদের কমেন্ট করে জানাতে পারেন। এরকম আরো গুরুত্বপূর্ণ তথ্যসমৃদ্ধ আর্টিকেল পড়তে নিয়মিত ভিজিট করুন My Teach Info। ধন্যবাদ।
My Teach Info এরনীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url