হাঙ্গেরি ওয়ার্ক পারমিট ভিসা

হাঙ্গেরি ওয়ার্ক পারমিট ভিসা বর্তমানে খুবই জনপ্রিয় এবং মানুষ প্রতিনিয়ত এই সম্পর্কে জানতে চায়। কেননা হাঙ্গেরি ইউরোপের একটি দেশ। দেশটির জীবনযাত্রার মান বর্তমানে খুবই উন্নত। দেশটিতে কাজের রয়েছে প্রচুর সুযোগ। আমাদের আজকের এই আর্টিকেলটি তাদের জন্য যারা ওয়ার্ক পারমিট ভিসা নিয়ে হাঙ্গেরিতে পাড়ি জমাতে চান। 

হাঙ্গেরি-ওয়ার্ক-পারমিট-ভিসা

তাছাড়া আরো আলোচনা করবো - হাঙ্গেরি ওয়ার্ক পারমিট ভিসার প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস, হাঙ্গেরি ওয়ার্ক পারমিট ভিসার খরচ কত, হাঙ্গেরি ওয়ার্ক পারমিট ভিসা পেতে কত দিন লাগে, হাঙ্গেরি মাসিক বেতন কত,হাঙ্গেরিতে কোন কাজের চাহিদা বেশি, হাঙ্গেরি ওয়ার্ক পারমিট ভিসা চেক ইত্যাদি। 

আর্টিকেল সূচিপত্র - হাঙ্গেরি ওয়ার্ক পারমিট ভিসা সংশ্লিষ্ট সূচিপত্র 

হাঙ্গেরি ওয়ার্ক পারমিট ভিসা 

হাঙ্গেরি ওয়ার্ক পারমিট ভিসা নিয়ে এই পর্যায়ে আলোচনা করবো। আপনি যদি ইউরোপীয় কোনো দেশের নাগরিক হয়ে থাকেন তাহলে ভিসা পাওয়ার জন্য আপনার কোনো ওয়ার্ক পারমিটের প্রয়োজন নেই। তবে যদি ইউরোপীয় ইউনিয়নের নাগরিক হয়ে না থাকেন তাহলে হাঙ্গেরিতে বৈধভাবে কাজ করার জন্য আপনার অবশ্যই ওয়ার্ক পারমিটের প্রয়োজন হবে। বাংলাদেশ থেকে হাঙ্গেরিতে গিয়ে কাজ করার জন্য অবশ্যই ওয়ার্ক পারমিটের প্রয়োজন হবে। আপনি বিভিন্ন ভাবে হাঙ্গেরিতে ওয়ার্ক পারমিট পেতে পারবেন যেমন - মৌসুমি কাজের জন্য ওয়ার্ক পারমিট, কর্মসংস্থানের ওয়ার্ক পারমিট, বিজনেস ভিসার ওয়ার্ক পারমিট এবং উচ্চ যোগ্য পেশাদার কর্মীদের ওয়ার্ক পারমিট। 
সিজনাল বা মৌসুমী ওয়ার্ক পারমিট ভিসা :
আপনার যদি একটি সিজনাল ওয়ার্ক পারমিট ভিসা থাকে তাহলে হাঙ্গেরির কৃষি কাজ করা,মাছ চাষ করা এবং খামারে কাজ করতে পারবেন। সিজনাল ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় তিন মাসের বেশি এবং ৬ মাসের কম কাজ করতে পারবেন। 
ওয়ার্কিং সেনজেন ভিসা :
সেনজেন দেশের কোনো নাগরিক যদি হাঙ্গেরিতে ভ্রমণ করতে চায় তাহলে সেনজেন ওয়ার্ক পারমিট ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবে কিন্তু এটা খুবই কম সময়ের জন্য হবে। 
সেনজেন বিজনেস ভিসা:
নন ইউরোপীয়ান কোনো নাগরিক যদি সেনজেন ভ্রমণ করে কোনো বিজনেস করার উদ্দেশ্যে তাহলে সেনজেন বিজনেস ভিসার আবেদন করতে পারবেন। এই ভিসায় অধিকারী ৯০ থেকে ৬ মাস পর্যন্ত হাঙ্গেরিতে অবস্থান করতে পারে। 
ইইউ ব্লু কার্ড:
আপনি যদি ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য হন এবং যদি উচ্চ যোগ্যতা থাকে, পারমানেন্ট রেসিডেন্ট থাকে তাহলে ইইউ ব্লু কার্ড পেতে পারেন।এই যোগ্যতা প্রমাণ করার জন্য আপনাকে ১৮ মাসের বেশি দেশটিতে অবস্থান করতে হবে। 

হাঙ্গেরি ওয়ার্ক পারমিট পাওয়ার প্রক্রিয়া:

আপনি যদি হাঙ্গেরি ওয়ার্ক পারমিট ভিসা পেতে চান তাহলে আপনাকে কতগুলো নিয়ম অনুসরণ করতে হবে। হাঙ্গেরিয়ানরা বিভিন্ন চাকরির বিজ্ঞাপন দিয়ে থাকে,যাতে করে নাগরিকরা ওয়ার্ক পারমিটের জন্য আবেদন করতে পারে। ওয়ার্ক পারমিট পাওয়ার জন্য বিদেশিদের ভিন্ন নিয়ম রয়েছে। ওয়ার্ক পারমিটের সংখ্যা পূর্বের বছরের তুলনায় অবশ্যই কম হতে হবে। শ্রম কেন্দ্রে আপনাকে ওয়ার্ক পারমিটের জন্য আবেদন করতে হবে। আবেদন করার ১০ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে আবেদন মঞ্জুর হয়ে যায়। যদি ওয়ার্ক পারমিট অনুমোদিত হয় তাহলে শ্রম কেন্দ্র থেকে রেজুলেশন ইস্যু করা হবে। 

হাঙ্গেরি ওয়ার্ক পারমিট ভিসার প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস 

ওয়ার্ক পারমিট ভিসা পাওয়ার জন্য যেকল ডকুমেন্টস প্রয়োজন নিচে তা দেওয়া হলো :
  • পূর্বে ভ্রমণের ডকুমেন্টস 
  • স্বাস্থ্য বিমা
  • কর্মসংস্থানের শর্ত পূরণ করা 
  • প্রবেশ ও প্রস্থানের উদ্দেশ্য শনাক্ত করা
  • বৈধ পাসপোর্ট 
  • বায়োমেট্রিক তথ্য 
  • আবেদনপত্রের ফটোকপি 
  • আবেদনকারীর বয়স হতে হবে ১৮ থেকে ৫০ বছর
  • পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট 
  • হাঙ্গেরিয়ান নিয়োগকর্তা কর্তৃক জব অফার 
  • কাজের অভিজ্ঞতার সনদপএ
  • শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদপত্র
  • ইউরোপীয়ান স্টাইলে সিভি ও কভার লেটার 
  • সম্প্রতি তোলা পাসপোর্ট সাইজের ছবি 
  • আর্থিক সামর্থ্যের প্রমাণপএ
সুতরাং বলা যায় যে, হাঙ্গেরি ওয়ার্ক পারমিট ভিসার জন্য আপনার উপরিউক্ত ডকুমেন্টস গুলোর প্রয়োজন হবে। 

হাঙ্গেরি ওয়ার্ক পারমিট ভিসার খরচ কত 

হাঙ্গেরি-ওয়ার্ক-পারমিট-ভিসা

হাঙ্গেরি ওয়ার্ক পারমিট ভিসা পেতে কত টাকা খরচ পড়বে তা অনেকগুলো বিষয়ের উপর নির্ভর করে। সাধারণত হাঙ্গেরির ওয়ার্ক পারমিট ভিসা ফি পড়বে ১১০ ইউরো, বাংলাদেশী টাকায় যা প্রায় ১৩ হাজার টাকার সমান। তাছাড়া অন্যান্য খরচ যেমন - স্বাস্থ্য বীমা,বিমান টিকিট এবং প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস, এজেন্সি খরচ, প্রক্রিয়াকরণ খরচ, আনুষঙ্গিক খরচ মিলে আপনার ১০ থেকে ১২ লক্ষ টাকার মতো খরচ পড়তে পারে। 

আপনার খরচ একটু কম পড়তে পারে যদি আপনি সরাসরি নিয়োগকর্তার মাধ্যমে ভিসার জন্য আবেদন করেন।আপনি যদি এজেন্সির মাধ্যমে আবেদন করেন তাহলে খরচ একটু বেশি পড়তে পারে। আবার দালালদের শরণাপন্ন হলেও খরচ বেশি হবে। 

হাঙ্গেরি ওয়ার্ক পারমিট ভিসা পেতে কত দিন লাগে 

হাঙ্গেরি ওয়ার্ক পারমিট ভিসা পেতে কত দিন লাগে এই সম্পর্কে জানতে পারবেন। হাঙ্গেরি ওয়ার্ক পারমিট ভিসা পেতে সাধারণত ২ থেকে ৩ মাস সময় লাগবে। আপনার যে নিয়োগকর্তা হবে সে ওয়ার্ক পারমিটের জন্য আবেদন করবে। ভিসা প্রক্রিয়াকরণ হতে ৫ থেকে ৬ মাস সময় লাগতে পারে। ওয়ার্ক পারমিটের জন্য আবেদন করলে তা ইস্যু হতে ১৫ থেকে ৪৫ দিন সময় লাগবে। 

হাঙ্গেরি মাসিক বেতন কত 

হাঙ্গেরি যাওয়ার পূর্বে অনেকেই জানতে চায় হাঙ্গেরি মাসিক বেতন কত? বর্তমানে হাঙ্গেরিতে শ্রমিকদের বেশ ভালো টাকা বেতন দেওয়া হয়। বাংলাদেশী একজন শ্রমিক হাঙ্গেরিতে বাংলাদেশী টাকায় ৮০ হাজার থেকে ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকার মতো বেতন পেয়ে থাকে। তবে আপনি যদি ওভারটাইম করেন তাহলে এই বেতনের পরিমাণ আরো বাড়বে।হাঙ্গেরির রাজধানী বুদাপেস্ট এ বেতন একটু বেশি দেওয়া হয়। 

হাঙ্গেরিতে কোন কাজের চাহিদা বেশি 

হাঙ্গেরিতে কোন কাজের চাহিদা বেশি এটা নিয়ে সবাই জানতে চায়। হাঙ্গেরিতে যেমন কাজের চাহিদা বেশি সেগুলো হলো:
  • ক্লিনার - বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান,হোটেল, অফিস পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করার জন্য ক্লিনার প্রয়োজন হয়।
  • ইলেকট্রিশিয়ান- বিভিন্ন বৈদ্যুতিক কাজ করার জন্য ইলেকট্রিশিয়ানের অনেক চাহিদা রয়েছে। 
  • রেস্টুরেন্ট বা হোটেল - বর্তমানে হাঙ্গেরিতে পর্যটন সার্ভিসের সংখ্যা বেড়েছে এজন্য হোটেল এবং রেস্তোরাঁ গুলোতে প্রচুর সংখ্যক শ্রমিক নিয়োগ দিচ্ছে।
  • নির্মাণ শ্রমিক - বিভিন্ন নির্মাণ শিল্পে কাজ করার জন্য দেশটিতে অনেক চাহিদা রয়েছে। 
  • ড্রাইভার- হাঙ্গেরিতে বিভিন্ন ধরনের বাণিজ্যিক গাড়ি,ট্রাক, বিশেষ ধরনের যানবাহন চালানোর জন্য ড্রাইভারের অনেক চাহিদা রয়েছে৷ 
সুতরাং উপরোক্ত কাজগুলোর দেশটিতে অনেক চাহিদা রয়েছে। আপনার যদি উপরের যেকোনো একটি কাজেরও অভিজ্ঞতা থাকে তাহলে এসব কাজের ভিসা নিয়ে পাড়ি জমান হাঙ্গেরিতে এবং উপার্জন করুন হাজার হাজার টাকা।

হাঙ্গেরি ওয়ার্ক পারমিট ভিসা চেক 

হাঙ্গেরি-ওয়ার্ক-পারমিট-ভিসা

হাঙ্গেরি ওয়ার্ক পারমিট চেক করা বর্তমানে খুবই সহজ। আপনি আপনার হাতে থাকা মোবাইল বা ডেক্সটপ দিয়ে সহজেই ওয়ার্ক পারমিট চেক করতে পারবেন। ওয়ার্ক পারমিট চেক করার জন্য গুগল ক্রোমে https://nemzeticegtar.hu লিখে সার্চ করুন। সার্চ করার পর যে পেইজটি আসবে তা ইংরেজি করে নিন। তারপর সকল কোম্পানি ডাটা প্রবেশ করান। প্রথম ঘরে কোম্পানির নাম লিখুন, তারপর রেজিষ্ট্রেশন নাম্বার, ট্যাক্স নাম্বার লিখে সার্চ করুন। সার্চ করার পর আপনার কোম্পানির সকল ডিটেইলস পেয়ে যাবেন। 

সুতরাং উপরোক্ত উপায়ে আপনি হাঙ্গেরিয়ান ওয়ার্ক পারমিট চেক করতে পারবেন। 

আর্টিকেল সম্পর্কিত প্রশ্ন-উত্তর 

প্রশ্ন ১: হাঙ্গেরি ওয়ার্ক পারমিট পেতে কত দিন লাগে?

উত্তর: হাঙ্গেরি ওয়ার্ক পারমিট পেতে ৩ থেকে ৪ মাস সময় লাগতে পারে। 

প্রশ্ন ২:হাঙ্গেরির টাকার নাম কি?

উত্তর: হাঙ্গেরির টাকার নাম ফরিন্ট। 

প্রশ্ন ৩: হাঙ্গেরির মাসিক বেতন কত?

উত্তর: হাঙ্গেরির মাসিক বেতন ৮০ হাজার থেকে ১ লক্ষ ২০ টাকার মতো হয়ে থাকে। 

প্রশ্ন ৪: ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় হাঙ্গেরি যেতে কত টাকা খরচ হবে? 

উত্তর: ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় হাঙ্গেরি যেতে ১০ থেকে ১২ লক্ষ টাকা খরচ পড়বে। 

প্রশ্ন ৫: হাঙ্গেরি ওয়ার্ক পারমিট ভিসা পাওয়ার জন্য বয়স কত হতে হবে? 

উত্তর: হাঙ্গেরি ওয়ার্ক পারমিট ভিসা পাওয়ার জন্য বয়স হতে হবে ১৮ থেকে ৫০ বছর। 

প্রশ্ন ৬:হাঙ্গেরি কি ইউরো নেয়? 

উত্তর: হাঙ্গেরির বুদাপেস্ট এর কিছু পর্যটন এলাকায় ইউরো নেয় কিন্তু সর্বএ ফরিন্ট চলমান। 

মন্তব্য 

আমাদের আজকের এই আর্টিকেলে হাঙ্গেরি ওয়ার্ক পারমিট ভিসা এবং সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। ওয়ার্ক পারমিট নিয়ে বিদেশ যাওয়ার পূর্বে অবশ্যই ভালো এজেন্সির মাধ্যমে পারমিট নিবেন এবং অবশ্যই নিজে নিজে যাচাই করে নিবেন। আর্টিকেল সম্পর্কে আপনার মতামত, পরামর্শ কিংবা প্রশ্ন আমাদের কমেন্ট করে জানাতে পারেন। এরকম আরো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সমৃদ্ধ আর্টিকেল পড়তে নিয়মিত ভিজিট করুন আমাদের ওয়েবসাইট My Teach Info । ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

My Teach Info এরনীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url