জমি না কিনে কিভাবে বাড়ি বানাবো?জেনে নিন
জমি কিনে বাড়ি তৈরি করা আমাদের দেশের একটি ঐতিহ্যগত প্রন্থা। অনেকেই আবার জানতে চায় জমি না কিনে কিভাবে বাড়ি বানানো যায়। মজার ব্যাপার হচ্ছে জমি না কিনে আসলেই বিকল্প উপায়ে বাড়ি বানানো যায়। আমাদের আজকের এই আর্টিকেলে আলোচনা করবো জমি না কিনে কিভাবে বাড়ি বানাবো? এই বিষয়টি নিয়ে। কাজেই আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।
তাছাড়া আরো আলোচনা করবো - বাড়ির প্ল্যান পাশ করার নিয়ম পৌরসভা, বাড়ি নির্মাণ আইন,বাড়ির প্ল্যান পাশ করাতে কত টাকা লাগে, পৌরসভায় বাড়ি করার সময় জায়গা ছাড়ার নিয়ম।
আর্টিকেল সূচিপত্র - জমি না কিনে কিভাবে বাড়ি বানাবো সংশ্লিষ্ট সূচিপত্র
- জমি না কিনে কিভাবে বাড়ি বানাবো
- বাড়ির প্ল্যান পাস করার নিয়ম পৌরসভা
- বাড়ি নির্মাণ আইন
- বাড়ির প্ল্যান পাস করাতে কত টাকা লাগে
- পৌরসভায় বাড়ি করার সময় জায়গা ছাড়ার নিয়ম
- লেখকের মন্তব্য
আরও পড়ুনঃ ইউরোপের কোন দেশে সহজে ভিসা পাওয়া যায়
জমি না কিনে কিভাবে বাড়ি বানাবো
জমি না কিনে কিভাবে বাড়ি বানাবো এই বিষয়টি নিয়ে আর্টিকেলের শুরুতেই আলোচনা করবো। নিচে কতগুলো উপায় নিয়ে আলোচনা করবো যেভাবে আপনি জমি না কিনে বাড়ি বানাতে পারবেন।
বন বিভাগে বাড়ি বানানো
আপনি যদি নির্দিষ্ট কতগুলো শর্ত মেনে চলেন তাহলে বন বিভাগের জমিতে বাড়ি বানানোর জন্য অনুমতি পেয়ে যাবেন। বন বিভাগে বাড়ি বানানোর জন্য আপনাকে বন বিভাগের অনুমোদন পেতে হবে এবং কঠোর নিয়মকানুন মেনে চলতে হবে।
ভাসমান বাড়ি তৈরি করা
আপনি যদি গতানুগতিক বাড়ি তৈরি করতে না চান তাহলে ভাসমান বাড়ি তৈরি করতে পারেন। ভাসমান বাড়ি তৈরি করলে আপনি ইচ্ছেমতো যেকোনো জায়গায় স্থানান্তর করতে পারবেন।
প্রকল্পে অংশগ্রহণ করা
বিভিন্ন সময় দেশের সরকার যারা নিম্ন আয়ের মানুষ তাদের জন্য বাসস্থান নির্মাণের পরিকল্পনা করে থাকেন। আপনি যদি এসব প্রকল্পগুলোতে আবেদন করেন তাহলে সরকারের সহায়তায় বাড়ি ও জমি পেয়ে যাবেন।
জমি ভাড়া করা
আপনি লিজ চুক্তির মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদী জমি ভাড়া নিতে পারেন। এতে আপনার জমি কেনার জন্য খরচ অনেক কম পড়বে এবং যা দিয়ে পরবর্তীতে জমি কিনতে পারবেন।
আত্মীয়স্বজন বা বন্ধ বান্ধবের জমিতে বাড়ি বানানো :
আপনার বন্ধু বান্ধব বা আত্মীয় স্বজনের যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ জমি থেকে থাকে তাহলে সেসব জমিতে আপনি বাড়ি বানাতে পারবেন। তবে অবশ্যই বাড়ি বানানোর পূর্বে এ সম্পর্কিত লিখিত ডকুমেন্টস নিবেন যাতে পরবর্তীতে কোনো ধরনের ঝামেলাতে পড়তে না হয়।
আরও পড়ুনঃ ইউরোপের নন সেনজেন ভুক্ত দেশের তালিকা
বাড়ির প্ল্যান পাস করার নিয়ম পৌরসভা
এই পর্যায়ে আমরা বাড়ির প্ল্যান পাস করার নিয়ম পৌরসভা নিয়ে আলোচনা করবো -
বাড়ি তৈরি করতে হলে অবশ্যই বাড়ির প্ল্যান পাস করাতে হবে। বাড়ির প্ল্যান করার জন্য দরকার হচ্ছে বাড়ির অনুমোদন ড্রয়িং করা। আপনি যদি পৌরসভার অধীন কোনো বাড়ি নির্মাণ করতে চান তাহলে পারবেন না কেননা আপনার কর্তৃপক্ষের অনুমতির প্রয়োজন পড়বে।
প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস :
- জমির পরিমান এবং জমির তফসিল
- বাড়ি যদি তিন তালার অধিক হয় তাহলে মাটি পরীক্ষার রিপোর্ট
- নির্ধারিত পরিমাণ ফি
- মৌজার নাম, খতিয়ান নম্বর ও দাগ নম্বর
- জমির মালিকের স্বাক্ষর
- পেশাজীবি সংগঠনের সীলমোহর, নাম্বার ও স্বাক্ষর
- প্রকৌশলীর স্বীকৃতিপএ
বাড়ির প্ল্যান পাস করানোর জন্য পৌরসভা থেকে আবেদন ফরম নিয়ে আবেদন ফরম পূরণ করতে হবে এবং ৭কপি ড্রইং জমা দিতে হবে। তবে পৌরসভা ভেদে এই পরিমান কম বেশি হতে পারে। ড্রইংগুলো অবশ্যই ট্রেসিং পেপার বা এমোনিয়া শিটে জমা দিতে হবে, ড্রইংগুলোর সাইজ হবে ৩০" ×২০" সাইজের।
ড্রইং শিটের প্রয়োজনীয় জিনিস:
- ইলেকট্রিক ড্রইং
- ছাদের পানি নিষ্কাশনের প্ল্যান
- মোট কভার এরিয়া
- মৌজা ম্যাপ
- সেনেটারী ড্রইং
- ফোর প্ল্যান
- লেআইট প্ল্যান
- সেকশন ও গ্রেড বীম
- ভবনের ক্রস সেকশন
- ফ্রন্ট এলিভেশন
- অন্যান্য ফ্লোরের প্ল্যান
- বীম, কলাম ও ফাউন্ডেশনের সেকশন
- সোক ওয়েল এবং সেফটিক ট্যাংক ও সেকশন
- কলাম লে আইট বা কলাম পজিশন
- সেটব্যাক যা অত্যন্ত জরুরী। এটি বলতে বোঝায় যে ভবনের চারপাশে নির্দিষ্ট পরিমান জমি ছেড়ে দেওয়া।
- ছাদের বিস্তারিত ড্রইং
বাড়ির প্ল্যান পাস করানোর জন্য যে ড্রইং শিট জমা দিতে হবে তার মধ্যে উপরোক্ত ডকুমেন্টস গুলোর প্রয়োজন হবে।
আরও পড়ুনঃ যুক্তরাজ্য ওয়ার্ক পারমিট ভিসা
বাড়ি নির্মাণ আইন
আপনি যখন বাড়ি করার জন্য জমি কিনবেন তখন অবশ্যই জমির সকল তথ্য জেনে নিবেন। এসব তথ্যের মধ্যে রয়েছে খতিয়ান নম্বর, ঠিকানা, মালিকের নম্বর, প্লট নাম্বার ইত্যাদি।
জমি কেনার পূর্বে অবশ্যই দলিলের প্রযোজ্যতা যাচাই করে নিবেন। আপনি যে জমি কিনবেন তা এুটিমুক্ত, নির্ভরযোগ্য এবং আসল হতে হবে। এজন্য আপনি সাব রেজিস্ট্রি অফিসের সাহায্য নিতে পারেন। সাব রেজিস্ট্রি অফিসে সকল দলিলের আসল তথ্য থাকে। আপনি যদি সাব রেজিস্ট্রারকে সরকারি নির্ধারিত ফি দেন তাহলে মূল দলিলের কপি করে নিতে পারবেন। আপনার দলিলে উত্তরাধিকার সূএে বৈধ বন্টকনামা আছে কি না তা যাচাই করে নিতে পারবেন। তাছাড়া আপনি রেজিস্ট্রার এর মাধ্যমে বিগত দশ বছরের তথ্য অনুসন্ধান করতে পারবেন।
জমির খতিয়ান বা পর্চা এলাকার তফসিল অফিস থেকে জেনে নিতে হবে। জমির মালিকের নামের সাথে অন্যান্য সকল তথ্য মিলিয়ে দেখতে হবে। যদি কোনো ভুল খুঁজে পান তাহলেও তার গ্রহণযোগ্য ব্যাখা উল্লেখ থাকবে।অনেকক্ষেত্রে দেখা যায় যে জমির দলিল যদি পুরাতন হয় তাহলে বিক্রেতার নাম উল্লেখ থাকে না। তবে একটি ব্যাপারে অবশ্যই খেয়াল রাখবেন জমির নাম মিউটেশন করে যেনো আপডেট করা থাকে।
সরকার অনেক সময় বিভিন্ন প্রয়োজনে জমি ইজারা দিয়ে থাকে। দেশের আইন অনুযায়ী সকল জমির মালিক একমাএ সরকার এবং এজন্যই সরকারকে প্রতিবার জমির খাজনা দিতে হয়। আপনি যে জমি কিনবেন তা সরকারি ইজারায় রয়েছে কি না তা অবশ্যই জেনে নিবেন। জমি কেনার পূর্বে অবশ্যই আগের বছর পর্যন্ত জমির খাজনা পরিশোধ আছে কি না তা দেখে নিতে হবে। পরবর্তীতে যদি জমির খাজনা থেকে থাকে তাহলে তা জমি ক্রয়ের মালিককে পরিশোধ করতে হবে। সুতরাং জমি কিনার পূর্বে অবশ্যই খাজনা পরিশোধের রশিদ দেখে নিবেন। কাজেই বাড়ি নির্মাণ করার পূর্বে অবশ্যই জমি সংক্রান্ত বিষয়গুলো ক্লিয়ার করে নিবেন।
আরও পড়ুনঃ জমজম পানি খাওয়ার নিয়ম জেনে নিন
বাড়ির প্ল্যান পাস করাতে কত টাকা লাগে
এই পর্যায়ে জানবো বাড়ির প্ল্যান পাস কত টাকা লাগে। সাধারণত দেখা যায় যে, মানুষ বাড়ি তৈরির পূর্বে বাড়ির প্ল্যান পাস করায় না। সাধারণত গ্রামের মানুষজন একবারেই বাড়ি তৈরি করার পূর্বে প্ল্যান পাস করায় না। সাধারণত যারা চাকরিজীবী এবং লোন নিয়ে বাড়ি তৈরি করে তারা বাড়ির প্ল্যান তৈরি করে। তবে শহরে বাড়ি তৈরি করতে হলে অবশ্যই বাড়ির প্ল্যান তৈরি করতে হবে। গ্রামে বাড়ির প্ল্যান তৈরির জন্য পঞ্চায়াতের কাছে আবেদন করতে হয়, আর শহরে বাড়ির প্ল্যান তৈরির জন্য অনলাইনে আবেদন করতে হয়।
অভিপিএস নামে একটি অ্যাপ রয়েছে যেখানে রেজিষ্ট্রেশন করতে হয়।তারপর আপনি যে ইঞ্জিনিয়ারের মাধ্যমে প্ল্যান পাশ করাবেন তা ভেরিফাই হয়ে আপনার পৌরসভাতে আসবে। পৌরসভার ইঞ্জিনিয়ার তখন আপনার বাড়ির জমি পরিদর্শন করতে আসবে। যদি সবকিছু ঠিকঠাক থাকে তাহলে বাড়ির প্ল্যান অনুমোদন হয়ে যাবে এবং আপনাকে অনলাইনে টাকা পরিশোধ করতে হবে। টাকার পরিমাণ কত হবে তা নির্ভর করে থাকে আপনার জমি কোন জায়গায় অবস্থিত হবে তার উপর।
আবার আপনি যে ইঞ্জিনিয়ারের মাধ্যমে বিল পাশ করাবেন তাকেও টাকা পরিশোধ করতে হবে। যদিও গ্রামের ক্ষেত্রে এই টাকার পরিমাণ কম পড়ে এবং শহরে একটু বেশি টাকা খরচ করতে হয়। যেমন -শহরে ১২২০ বর্গফুট জায়গার জন্য ২০ হাজার টাকা (প্রায়)লাগতে পারে, আবার ইঞ্জিনিয়ারের বেতনও দিতে হবে। তবে গ্রামের বাড়ির প্ল্যান তিন থেকে চার হাজার টাকার মধ্যে হয়ে যাবে৷ তবে বাড়ি যদি দোতলা বা তিন তলা বিশিষ্ট হয় তাহলেও খরচ বেশি হবে।
আরও পড়ুনঃ বিদেশ যাওয়ার সরকারি এজেন্সি
পৌরসভায় বাড়ি করার সময় জায়গা ছাড়ার নিয়ম
আর্টিকেলের এই অংশে জানতে পারবেন পৌরসভায় বাড়ি করার সময় জায়গা ছাড়ার নিয়ম সম্পর্কে। মনে করেন যে, আপনার পৌরসভাতে ৪ কাঠা জমি রয়েছে। এখন যদি আপনি এই জমিতে বাড়ি তৈরি করতে চান তাহলে আপনি এমনি এমনি বাড়ি তৈরি করতে পারবেন না। বাড়ি তৈরির সময় অবশ্যই আপনাকে সামনে পিছনে দুই সাইডে কিছু পরিমাণ জায়গা খালি রাখতে হবে। ধরেন যে আপনার ৩ কাঠা জমির দৈর্ঘ্য ৫০ ফুট এবং প্রস্থ ৪৫ ফুট। সেই জমিতে আপনি ১০ তলা সমান একটি বাড়ি তৈরি করতে চান তাহলে আপনাকে বাড়ির সামনের দিকে ১.৫ মিটার এবং পিছনের দিকে ১ মিটার জায়গা খালি রাখতে হবে।
আবার বাড়ির দুই সাইডেও এক মিটার করে জায়গা খালি রাখতে হবে। জায়গার পরিমাণ যদি ৩ কাঠার উপর থেকে ৪ কাঠার মধ্যে হয় তাহলে আপনার বাড়ির সামনে ১.৫ মিটার পিছনে ১.৫ মিটার এবং দুই সাইডে ১ মিটার করে জায়গা খালি রাখতে হবে। জায়গার পরিমাণ যদি ৪ কাঠার উপর থেকে ৫ কাঠার মধ্যে হয় তাহলে বাড়ির সামনের দিকে ১.৫ মিটার, পিছনের দিকে ২ মিটার এবং সাইডে ১.২ মিটার করে জায়গা খালি রাখতে হবে।
জায়গার পরিমান যদি ৫ কাঠার উপর থেকে ২০ কাঠার মধ্যে হয় তাহলে বাড়ির সামনের দিকে ১.৫ মিটার, পিছনের দিকে ২ মিটার, দুই সাইডে ১.২৫ মিটার জায়গা খালি রেখে জমি তৈরি করতে হবে৷ জায়গার পরিমান ২০ কাঠার চেয়ে বেশি হলে সামনের দিকে ১.৫ মিটার, পিছনের দিকে ২ মিটার এবং দুই পাশে ১.৫ মিটার করে জায়গা খালি রাখতে হবে। সর্বশেষে যেকোনো পরিমান জায়গার ক্ষেত্রে সামনে ১.৫ মিটার, পিছনে ৩ মিটার এবং দুই সাইডে ৩ মিটার করে জায়গা খালি রাখতে হবে।
সুতরাং, এখন নিশ্চয় পৌরসভায় বাড়ি করার সময় জায়গা ছাড়ার নিয়ম সম্পর্কে অবহিত হয়েছেন।
আরও পড়ুনঃ মোবাইল দিয়ে অনলাইন ইনকাম ২০২৪
মন্তব্য
আমাদের আজকের এই আর্টিকেলে জমি না কিনে কিভাবে বাড়ি বানাবো এবং সংশ্লিষ্ট অনেক বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আশা করছি আর্টিকেল পড়ে অনেক উপকৃত হয়েছেন। আর্টিকেল সম্পর্কে আপনার মতামত, পরামর্শ কিংবা প্রশ্ন আমাদের কমেন্ট করে জানাতে পারেন। এরকম আরো গুরুত্বপূর্ণ তথ্যসমৃদ্ধ আর্টিকেল পেতে নিয়মিত ভিজিট করুন আমাদের ওয়েবসাইট My Teach Info। ধন্যবাদ।
My Teach Info এরনীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url